আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী-পর্যায়ের ভার্চুয়াল বৈঠকের আগে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নয়াদিল্লি সফর করবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
পররাষ্ট্র সচিবের দিল্লি সফরের বিষয়টি ইউএনবিকে নিশ্চিত করে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আলোচনার জন্য উভয় দেশের অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। তাই, প্রধানমন্ত্রীর পর্যায়ের আলোচনার আগে মূলত পরামর্শের জন্য পররাষ্ট্র সচিব দিল্লি সফর করবেন।’
অন্য এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ১৬ ডিসেম্বর বা ১৭ ডিসেম্বর ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেবেন।’
এছাড়া, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উন্নতি হলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী বাংলাদেশ সফর করবেন বলে উভয় পক্ষেরই সম্মতি রয়েছে।
এর আগে, মোদীর সফরের সময় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের ইঙ্গিত দিলেও বিস্তারিত জানাননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন।
তবে কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তীতে উভয়পক্ষ শান্তিপূর্ণভাবে স্থলসীমা ও সামুদ্রিক সীমানা নির্ধারণের মতো আরও অনেক বিষয়ে চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
দুদেশের নদী ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে সমুদ্র অর্থনীতি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে সুযোগ অন্বেষণের মাধ্যমে ব্যবসা ও বাণিজ্য বাড়ানোর দিকে বেশি জোর দিচ্ছে।
গত ৫ নভেম্বর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে ৩ কোটি ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহে জন্য সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেই সাথে দুই দেশের মধ্যে এয়ার বাবল ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
গত শুক্রবার ড. মোমেন বলেন, ‘ভারত আমাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ও ঐতিহাসিক বন্ধু। এটি অত্যন্ত দৃঢ় এবং এখন আমরা সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় পার করছি। দুই দেশ নেতৃত্বের পরিপক্কতা দেখানোর ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ‘
যৌথভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আগামী ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
‘আমরা তাকে (নরেন্দ্র মোদী) আমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং তারা আামদের আমন্ত্রণে নীতিগতভাবে সায় দিয়েছে,’ বলেন ড. মোমেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে ডিসেম্বরের ভার্চুয়াল সম্মেলনটি মোদীর ব্যক্তিগত সফরের বিকল্প নয় বলে আশ্বস্থ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোড়াইস্বামী।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলমের সাথে সম্প্রতি এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘বরং এটি পরিপূরক শীর্ষ সম্মেলন হবে।’
কর্মকর্তারা বলেন, ডিসেম্বরে দু'দেশের মধ্যকার পানির ইস্যুতে মন্ত্রী-পর্যায়ের বৈঠকের আগে পানিসম্পদ সচিব-পর্যায়ের বৈঠক করার জন্য বাংলাদেশ ও ভারত আলোচনা করছে।
দু’দেশই সাধারণ নদীর পানি ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনার জন্য এ বছর যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) একটি বৈঠক করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ৫ অক্টোবর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ভারতীয় সমকক্ষ মোদী নয়াদিল্লিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমন্ত্রণে সরকারি সফরে ভারতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নয়াদিল্লিতে তার সরকারি সফর ছাড়াও সেসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ৩-৪ অক্টোবর ভারতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আয়োজিত অর্থনৈতিক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী তিস্তার পানি ভাগাভাগির জন্য ২০১১ সালে উভয় সরকারই সম্মত হয়ে স্বাক্ষর করা অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির কাঠামোর শিগগির বাস্তবায়ন দেখার জন্য বাংলাদেশের জনগণ অপেক্ষা করছে বলে উল্লেখ করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছিলেন, শিগগিরই চুক্তির বাস্তবায়নে তার সরকার ভারতের সব অংশীজনদের সাথে কাজ করছে।
বাংলাদেশ সম্পর্কিত সব ইস্যুতে পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান সন্ধানের জন্য তার সরকারের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোড়াইস্বামী।
বিশ্ব বাংলাদেশকে নতুন সম্মানের সাথে দেখছে উল্লেখ করে সাংবাদিকদের সাথে তার প্রথম বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমাকে বলতেই হবে বাংলাদেশ ভারতের বিশেষ অংশীদার হিসেবে আছে, ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রত্যাশা পূরণে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।
এ অঞ্চলের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহযোগিতা বিষয়ে সার্ক দেশগুলোর মধ্যে হওয়া ভার্চুয়াল বৈঠকে গত মার্চ মাসে যোগ দিয়েছিলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী।